ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

এলোমেলো পথে বিএনপি

এক দশক ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির এখন সবকিছুই এলোমেলো। সুষ্ঠুভাবে কোনো কিছুই হচ্ছে না। নেই ভবিষ্যতের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। কাউন্সিল করলেও দল এখনো অগোছালো। সাংগঠনিক তৎপরতা এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যে, অনুমতি ছাড়া কোথাও সভা-সমাবেশ করার সামর্থ্যও নেই। ঢাকা মbnpহানগর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো খুবই দুর্বল। আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও তৃণমূলে কোনো কার্যক্রম নেই। অন্য মহানগরগুলোরও একই অবস্থা। বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রংপুরে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক। তবে মহানগর বা কেন্দ্রের ব্যর্থতার শাস্তি পোহায় তৃণমূল। ঢাকায় কোনো কর্মসূচি পালন করতে না পারলে বিক্ষোভ দেওয়া হয় জেলা পর্যায়ে। এর পরও জেলা-উপজেলার কমিটিতে মূল্যায়িত হন না ত্যাগীরা। কেন্দ্রের প্রভাবশালী নেতাদের পকেটের লোকজনকেই নেওয়া হয় তৃণমূলে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের রাজনৈতিক কৌশলের পাল্টা কৌশল নির্ধারণ করতে পারছে না বিএনপি। দল গোছানোর জন্য নেই সময়সীমা। বছরজুড়েই চলছে সাংগঠনিক তৎপরতা। তবুও দল গুছিয়ে তুলতে পারছে না। এজpন্য থাকতে হয় সুনির্দিষ্ট সময়সীমা। বছরের পর বছর কমিটি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে, তা কাম্য নয়।

তাদের মতে, গত দুই বছরে ৭৫টির মধ্যে কেন মাত্র ২২টি জেলা কমিটি হবে, তাও বিশ্লেষণ করতে হবে। কমিটি করার  পথে বাধাগুলো কী, এ নিয়ে তৃণমূল নেতাদের সুপারিশ কার্যকর করতে হবে। কেন্দ্র থেকে পকেট কমিটি গঠন বন্ধ করতে হবে। নেতাদের তৃণমূলে গিয়ে বাস্তবতার নিরিখে কমিটি দিতে হবে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সারা বছরই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। সুখে-দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। দলের সিনিয়র নেতাদের মাঠ পর্যায়ে সফর করতে হবে। প্রয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেও অন্ততপক্ষে বিভাগীয় জেলাগুলোয় সফর করা উচিত। এতে তৃণমূল উজ্জীবিত হয়।

বিশ্লেষকরা এও বলছেন, ক্ষমতার পালাবদল হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। হাজারো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিএনপির নির্বাচন বর্জন করা উচিত হবে না। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলের হাঁটতে হবে গণতান্ত্রিক পথে। এর বাইরে ভিন্ন কোনো চিন্তাও করা যাবে না। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে সব গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপিকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করতে হবে। থাকতে হবে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে না পারলে আরও কয়েকটি বিকল্প নিয়ে নেতাদের আলোচনা করতে হবে। কিন্তু তার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ’ বিশিষ্ট এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশপাশে যারা থাকছেন তাদের উচিত হবে নির্মোহ সত্য কথাগুলো তুলে ধরা। মাঠের বাস্তবতা তাকে জানানো। সব ধরনের তোষামোদী থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। সিনিয়র নেতাদেরও বেগম জিয়ার সঙ্গে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরতে হবে। সত্য কথা দলের প্রধানের কাছে তুলে ধরতে না পারলে এর খেসারত দিতে হবে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের। ’ বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলছেন ভিন্ন কথা। তার মতে, ‘বিএনপি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে না, এটা ভুল ধারণা। তিনি বলেন, ‘আমরা সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের পথে আছি। এখনো সেই দাবি আদায়ে আন্দোলন করছি। এটা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। এখন আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। কোনো প্রতিবাদ করতে পারছি না। এটা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতি। দায়ী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ’

অনুমতি ছাড়া বিএনপি সভা-সমাবেশ করতে পারছে না— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি মধ্যপন্থি গণতান্ত্রিক দল। আমরা চাইলে অনুমতি উপেক্ষা করে সভা-সমাবেশ করতে পারি। কিন্তু এতে সহিংসতা বাড়বে। এ মুহূর্ত সে পথে যেতে চাই না। সংঘাত নয়, আমরা চাই রাজনৈতিক সমঝোতা। আশা করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। ’

বিএনপি সমর্থক আরেক বুদ্ধিজীবী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রজন্ম লীগের কিছু নেতা-কর্মী হামলা করেন। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ভাঙচুর করেন। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। তারেক রহমানসহ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সাজার রায়ও এসেছে। তার বক্তব্য প্রচার করাও নিষিদ্ধ। এই বৃদ্ধ বয়সে বিএনপি চেয়ারপারসনকে প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজির হতে হচ্ছে। এ নিয়েও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। দলের তৃণমূলের নেতারা বলছেন, এখন সবার আগে ঢাকা মহানগর বিএনপিকে ঢেলে সাজানো জরুরি। ত্যাগী নেতাদের সমন্বয়ে প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানা কমিটি করতে হবে। ঢাকা মহানগরকে দুই কিংবা চার ভাগে ভাগ করে নেতৃত্ব দিতে হবে মাঠে থাকা নেতাদের। ছাত্রদল ও যুবদলকেও ঢেলে সাজাতে হবে। শুধু কেন্দ্রেই নয়, তৃণমূলে এ দুই সংগঠনকে গঠন করতে হবে বাস্তবতার নিরিখে। আন্দোলন-সংগ্রামে থাকা নেতাদের সামনের সারিতে নিয়ে আসতে হবে। অন্য মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলো জানুয়ারির মধ্যেই গঠন করা জরুরি। চলতি বছরের প্রথম দিকে অসম্পূর্ণ কমিটিগুলো সম্পূর্ণ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। এ নিয়ে সরকারের কৌশলের বিরুদ্ধে পাল্টা কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সাংগঠনিক দুর্বলতা কিছু থাকেই। এর জন্য দল পিছিয়ে পড়েছে, তাও ঠিক নয়। তবে ঢাকা মহানগরের দুর্বলতা আছে। ছাত্র, যুব কিংবা শ্রমিক দলের কিছু সমস্যা আছে। জেলা পর্যায়ে সব কটিতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। এটাও সত্য। বিএনপি এখন খালি হাতে রাজনীতি করছে। বৈধ-অবৈধ অস্ত্র নেই। এটা শুধু ক্ষমতাসীনদের হাতে। এ অবস্থায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে হচ্ছে। তবে ঢাকায় সভা-সমাবেশ সফল না হওয়ারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এখানে সবকিছুই মনিটর করছেন প্রধানমন্ত্রী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান কার্যালয় ঢাকায়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও কমবেশি সভা-সমাবেশ চলছে। ’ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সঞ্জীব চৌধুরীর মতে, ‘বাইরে থেকে বিএনপিকে যতটুকু এলোমেলো মনে হয়, ভিতরে আসলে ততটা নয়। বিএনপিকে লক্ষ্যহীন বলাটাও ঠিক হবে না। একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়, সেজন্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়েও প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে এও ঠিক, সাংগঠনিক কাজে কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। ’ । সুত্র -বাংলাদেশ প্রতিদিন ::

পাঠকের মতামত: